কেউ কেউ বলেন যে, শিশুদেরও মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। তার মানে কি এই যে তারা যা বলবে তা-ই আমাদের শুনতে হবে?
আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। মা-বাবাসহ বড়দের অনেকেই এমন দ্বিধায় ভোগেন। জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিষয়ক সনদের অনুচ্ছেদ ১২ তে উল্লেখ আছে:
“যেসব শিশুরা নিজস্ব মতামত গঠনে সক্ষম, তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সকল বিষয়ে স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে। তাদের বয়স ও চিন্তাশক্তির পরিপক্কতা অনুযায়ী তাদের মতের গুরুত্ব দিতে হবে।”
বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতি ও শিশুদের মতামত শোনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে সব ক্ষেত্রে, যার মধ্যে আছে পরিবার ও স্কুল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন। যেমন, শিশুরা কী খেতে চায় অথবা কেমন পোশাক পরতে চায় তা শুনতে হবে বড়দের। শিশুরা স্কুলে কেমন পড়াশোনার পরিবেশ চায়, কীভাবে অবসর সময় কাটাতে চায় তা-ও জানতে চাইতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ইত্যাদি নিয়ে নীতিমালা বা স্থানীয় এবং জাতীয় বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দিলে তাদের জন্য সেবার মান বাড়ে। কারণ শিশুদের জীবনের বাস্তবতা তারাই সবচেয়ে ভাল জানে। তবে মতের গুরুত্ব দেয়ার সময় তাদের বয়স এবং চিন্তা করার ক্ষমতা মনে রাখা দরকার।
শিশুদের কথা শোনার মানে এই নয় যে, তারা যা চাইবে তা-ই করতে পারবে। শিশু অধিকার বিষয়ক সনদের একটি মূলনীতি হল, ‘শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ’। যদি শিশু এমন কিছু করতে চায় বা না চায় যার ফলে তার কোনো ক্ষতির আশংকা থাকে, তবে মা-বাবা কিংবা সংশ্লিষ্ট বড়দের দায়িত্ব হল তাকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া, এবং কেন তার মতামত শোনা হলেও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না সেটি বুঝিয়ে বলা। যেমন শিশু যদি সুষম খাবার খেতে না চায়, অনলাইনে প্রচুর সময় কাটায় তবে তাকে বোঝাতে হবে যে, এর ফলে তার জীবনে ইতিবাচক কিছু ঘটবে না এবং এসব থেকে তাকে বিরত রাখতে হবে। মা-বাবা যদি বুঝতে পারেন যে কোনবিষয়ে শিশুর মতামত অনুযায়ী চললে তার ক্ষতি হতে পারে তখন তাদের রক্ষা করা মা-বাবারই দায়িত্ব। তবে অন্য সবক্ষেত্রে তাদের মতামত শোনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তা বিবেচণা করা প্রয়োজন।
রবি, ১৮ অক্টো ২০২০, রাত ৩:৩৩ সময়
Login & Write Comments