রোগাক্রান্ত শিশুর করোনা-সতর্কতা
শিশুরাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। যদিও শিশুদের মধ্যে এ রোগের জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বয়স্কদের তুলনায় অনেকাংশে কম। তবে এই কথা সব শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক শিশুর দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ আছে, যেমন ডায়াবেটিস, থ্যালাসেমিয়া, জন্মগত হার্টের সমস্যা, শরীরের ত্রুটিপূর্ণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা, ক্যান্সার, স্থূলতা, কিডনি রোগ, মস্তিষ্কের সমস্যা ইত্যাদি। তারা করোনায় সংক্রমিত হলে তাদের নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে।
বিদ্যমান অসুস্থতার জন্য শিশু যেসব ওষুধ, ব্যায়াম, খাবারদাবার বা স্বাস্থ্যবিধি আগে থেকেই মেনে চলত, তা অব্যাহত রাখতে হবে। শিশুর প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখতে হবে। পাশাপাশি দরকার চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, যেমন টিকা দেওয়া বা অন্য কোন জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার দরকার হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ভিড় এড়িয়ে যেতে হবে।
করোনা প্রতিরোধের মূলমন্ত্র স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়মিতভাবে সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা ইত্যাদি শক্তভাবে অনুসরণ করতে হবে। শিশুদের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে হবে। এ সময় ঘরের ভেতরে শিশুদের আনন্দময় পরিবেশে রাখতে হবে। ছবি আঁকা, হালকা ব্যায়াম, খেলাধুলা বিভিন্ন আয়োজন করা যেতে পারে।
পরিবারে কেউ করোনা বা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাঁকে অবশ্যই শিশুর থেকে দূরে রাখতে হবে। তখন ঘরেও মাস্ক পরতে হবে। শিশু যদি কোনোভাবে রোগীর সংস্পর্শে চলে আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। জনসমাগমে এই শিশুদের কখনোই নেওয়া যাবে না। এ সময় বাসায় অতিথি আসা নিরুৎসাহিত করতে হবে।
বাইরে থেকে কেউ বাসায় ঢোকার আগে সাবানপানি দিয়ে ভালোভাবে হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে। বাইরে থেকে এসে গোসল করার পর শিশুর সংস্পর্শে যেতে হবে। ঘরের যেসব জায়গায় এই শিশুদের চলাচল বেশি, সেসব জায়গা প্রতিদিন কয়েকবার করে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
শিশুর খাবার পুষ্টিকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ ও মুখরোচক হতে হবে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফলমূল বা কমলা, লেবু, আমের রস খেতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত শিশুর করোনা হলে
উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই শিশুকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। পালস অক্সিমিটার দিয়ে শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫-এর ওপরে আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর শরীরে র্যাশ, চোখ, ঠোঁট, জিভ অস্বাভাবিকভাবে লাল হচ্ছে কি না, প্রস্রাবের পরিমাণ, পেটে ব্যাথা, বুক ধরফড় বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না বা মাড়ি, নাক দিয়ে রক্ত আসছে কি না লক্ষ করতে হবে। যেসব শিশু ডায়াবেটিসে ভুগছে, তাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ইনসুলিনের ডোজ সমন্বয় করতে হবে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর রক্তের হিমোগ্রোবিন বাড়াতে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে।
লিখেছেনঃ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা
বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল
সৌজন্যেঃ প্রথম আলো
ছবিঃ ইউনিসেফ
সোম, ৯ আগ ২০২১, রাত ১০:২৭ সময়
Login & Write Comments