সন্তানদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার আগে ভাবুন

সন্তানদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার আগে ভাবুন

ইদানীং অনেক মা-বাবা সন্তানদের জীবনের নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। তার মধ্যে আছে শিশুদের পছন্দ-অপছন্দ, পড়াশুনা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্জন, সমস্যা ইত্যাদি।

শিশুদের অবস্থান, নাম, জন্ম তারিখ, বিদ্যালয়ের নামসহ ব্যক্তিগত তথ্যের প্রকাশ তাদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। খারাপ উদ্দেশ্য আছে এমন কেউ এই তথ্য অপব্যবহার করে নানা ধরণের ক্ষতি করতে পারে। শিশুদের স্বল্পবসনের ছবি পোস্ট করার কারণে তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনুপযুক্ত পোস্টের ফলে স্কুলে শিশুদের উপহাসের শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া পরবর্তীতে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা নিয়োগদাতারা  এই ধরণের পোস্ট দেখে ফেললে প্রার্থী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।

বিভিন্ন দেশের গবেষণায় অনেক শিশু জানিয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের সন্তানদের নিয়ে কোনকিছু প্রকাশ করবে না। মা-বাবার করা পোস্টগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইনে থেকে যায় এবং তাদের জন্য বিব্রতকর হতে পারে- এনিয়েই তারা উদ্বিগ্ন। কারোর আশঙ্কা এতে তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে। 

শিশুদের নিয়ে পোস্ট করার আগে যে বিষয়গুলি ভাবতে হবেঃ

-শিশুদের নিয়ে অনলাইনে যতটা সম্ভব কম পোস্ট করা  উচিত। মা-বাবাকে ভাবতে হবে যে তাদের পোস্টের কারণে সন্তানরা ভবিষ্যতে লজ্জিত, বিব্রত, উদ্বিগ্ন বা বিরক্ত হবে কিনা? এতে সন্তানের কোন ক্ষতি হতে পারে কি? মা-বাবা ও সন্তানের সম্পর্কে কি কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে?

-শিশুদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা এড়িয়ে চলতে হবে। পোস্ট দেখে যাতে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার রুটিন সম্পর্কে কেউ জানতে না পারে তা খেয়াল রাখাটা জরুরি।

-শিশুর কান্না, ব্যথা বা কষ্ট পাওয়া এবং তাকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে কোন ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা ঠিক না।

-সাঁতারের পোশাকের মত স্বল্পবসনে শিশুদের ছবি পোস্ট করা অনুচিত। 

-জিওট্যাগিং (যার মাধ্যমে ইন্টারনেটে একজন ব্যক্তির অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়) বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন।

-গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি সেটিংস এমন হবে যাতে পোস্টগুলি শুধুমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা দেখতে পারে। তারা যাতে এই পোস্ট শেয়ার না করেন তা বলে দিতে হবে।

-চার বছর বয়সেই শিশুরা আত্মসচেতন হয়ে ওঠে। শিশুদের নিয়ে পোস্ট করার সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে জানিয়ে তারপর  তাদের মতামত জানতে  হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের "না" বলার অধিকার আছে, এবং বড়দের  উচিত তাদের মতকে সম্মান করা।

অভিভাবকরা যদি শুধু “লাইক” পাওয়ার জন্য পোস্ট করেন তাহলে শিশুরাও শিখবে যে অন্যের অনুমোদন ও প্রশংসাই জীবনের সবকিছু। এটি তাদের সুষ্ঠ বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। 

বড়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিষ্টাচার বজায় রাখলে শিশুদের সামনে তারা ভাল দৃষ্টান্ত তুলে ধরবেন এবং অনলাইনের জগতে বিচরণ শিশুদের জন্য ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হবে।

ছবিঃ Getty Images


মঙ্গল, ২৩ নভে ২০২১, রাত ১০:৫৮ সময়

মতামত/ পরামর্শ/ প্রশ্ন


“শিশুরাই সব” এর এ পর্যায়ে আমরা আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করছি।
ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কি ধরণের বিষয় দেখতে চান তা জানান। লেখা পড়ে, ভিডিও দেখে শেয়ার বা মন্তব্য করুন। সন্তান পালন বা শিশুসংক্রান্ত বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে জানান। আমরা উত্তর দেব।
ওয়েবসাইটে শিশুদের জন্য আপনার ভাবনাগুলো লিখে পাঠান (সর্বোচ্চ ৫০০ শব্দ)। এছাড়া নিজের বা আপনার সংস্থার ভিডিও, রিপোর্ট, অনুষ্ঠানের তথ্য ইত্যাদি শেয়ার করুন। উপযুক্ত হলে আমরা প্রকাশ করব।

যোগাযোগ