কীভাবে সন্তান পালন করলে তাদের বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যায়?

সন্তানদের বড় করার ক্ষেত্রে অনেক মা-বাবার অতি সাবধানী মনোভাব দেখা যায়। চারদিকে বিপদ ওঁত পেতে আছে, এই বলে আমরা ছেলে-মেয়েদের সাবধান করতে থাকি যা সবক্ষেত্রে ইতিবাচক নয়। কীভাবে সন্তান পালন করলে তাদের বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যায়?

সন্তান পালনের নানা ধরণ প্রচলিত। অনেক মা-বাবা ছেলে-মেয়েদের জন্য কোন বিষয়টি ভাল বা তাদের “সর্বোত্তম স্বার্থ” বিবেচনা না করেই তাদের সব আবদারে “হ্যাঁ” বলে থাকেন। আবার কেউ কেউ সন্তানদের মতামত অগ্রাহ্য করে তাদের ওপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন, এবং তাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে চান। সন্তান পালনের উপর গত ত্রিশ বছরে সম্পাদিত প্রায় শতাধিক গবেষণার সারাংশ থেকে দুটি বিষয় বলা যায়- শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা ও উষ্ণতা ঘেরা পরিবেশ এবং শেখার জন্য যথাযথ কাঠামো। উষ্ণতা প্রদান বলতে বোঝায় তাদের প্রতি আস্থা ও সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। শেখার উপযুক্ত কাঠামোতে থাকে তথ্য, নির্দেশনা ও শিক্ষা প্রদান। এটি শাস্তি, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং অনেক দেশে প্রচলিত কঠোরভাবে সন্তান পালনের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা।
 
মা-বাবার কাছ থেকে সঠিক নির্দেশনা পাওয়া সন্তানদের অধিকার। কিন্তু তাদের অতি সাবধানী মনোভাব সন্তানের জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব তো রাখেইনা বরং তা তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনেক মা-বাবা সন্তাদের জীবন নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করতে থাকেন, যা কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনা। সন্তানদের বয়স এবং চিন্তাশক্তির পরিপক্কতা অনুসারে তাদের নির্দেশনা দেয়া উচিত। যেমন ছয় মাস বয়সী কোনো শিশুর বোঝার ক্ষমতা নেই যে, কিছু মুখে দিলে তার ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে মা-বাবাকেই নিশ্চিত করতে হবে শিশু যেন ক্ষতিকারক জিনিস মুখে না দিতে পারে এবং নিরাপদ থাকে। বয়:সন্ধিকালে মা-বাবাকে অবশ্যই সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের মাত্রাতিরিক্ত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তার আগ্রহের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেও কিন্তু মা-বাবা বুঝতে পারবেন যে, সে কোন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়ছে কিনা এবং এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবেন। সন্তান পালনে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা প্রয়োজন। 
 
মা-বাবার দায়িত্ব হলো এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে সন্তানরা আনন্দের সঙ্গে বেড়ে উঠতে পারে এবং তাদের জীবনের সম্ভাবনাগুলো বিকশিত হয়। সফল হবার জন্য যে মানসিকতা ও গুণাবলী প্রয়োজন তা কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয় যদি মা-বাবা তাদের অতিরিক্ত আগলে রাখেন। এর ফলে সন্তানদের মধ্যে নিজস্ব চিন্তাভাবনা, মানিয়ে নেওয়া, বিশ্লেষণ করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারেনা। মা-বাবাদের বুঝতে হবে যে, তাঁরা সবসময় সন্তানদের পাশে থাকতে পারবেন না। তারা বেড়ে উঠবে এবং তাদের জীবন তাদেরই পাড়ি দিতে হবে। তাই তাদের দক্ষতা তৈরিতে সহায়তা করা উচিত যাতে তারা জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
 


রবি, ২ আগ ২০২০, সকাল ৪:৯ সময়

মতামত/ পরামর্শ/ প্রশ্ন


“শিশুরাই সব” এর এ পর্যায়ে আমরা আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করছি।
ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কি ধরণের বিষয় দেখতে চান তা জানান। লেখা পড়ে, ভিডিও দেখে শেয়ার বা মন্তব্য করুন। সন্তান পালন বা শিশুসংক্রান্ত বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে জানান। আমরা উত্তর দেব।
ওয়েবসাইটে শিশুদের জন্য আপনার ভাবনাগুলো লিখে পাঠান (সর্বোচ্চ ৫০০ শব্দ)। এছাড়া নিজের বা আপনার সংস্থার ভিডিও, রিপোর্ট, অনুষ্ঠানের তথ্য ইত্যাদি শেয়ার করুন। উপযুক্ত হলে আমরা প্রকাশ করব।

যোগাযোগ