শিশুর করোনা টিকা কেন জরুরি?
কিছু দেশ বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও করোনার টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ইসরায়েলসহ কিছু দেশ ইতোমধ্যে সীমিত পরিসরে শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের করোনার টিকার আওতায় আনা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত শিশুদের টিকা দেওয়া উচিত।
শিশুকে টিকা দিতে হবে যে কারণে
আগে ধারণা করা হয়েছিল, শিশুর করোনা সংক্রমণে জটিলতার ঝুঁকি কম। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শিশুদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে করোনার নতুন ধরনগুলোয় শিশুদের আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। তা ছাড়া শিশুরা বড়দের মতোই সংক্রমণ ছড়ায়।আবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত শিশুদের করোনা সংক্রমণে জটিলতার ঝুঁকি বেশি। এসব কারণ বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ প্যানেল শিশুদের করোনার টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে।
শিশুর জন্য নিরাপদ কোন টিকা
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের যৌথভাবে উদ্ভাবিত টিকা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্নার টিকাও শিশুদের প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। এ দুটি টিকা আরও কম বয়সী শিশুর ওপর প্রয়োগের জন্য পরীক্ষা চলছে। ফল সন্তোষজনক হলে ২০২২ সাল নাগাদ শিশুদের জন্য এ দুই টিকা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাবে। এ ছাড়া চীনের সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মের টিকাও শিশুদের ওপর প্রয়োগের বিষয়ে পরীক্ষা চলছে।
শিশুকে টিকা দিতে কিছু তথ্য
বড়দের মতো শিশুদেরও করোনার টিকা দেওয়ার পর টিকাকেন্দ্রে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে শিশুকে টিকা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে, যাতে সে টিকা নিতে ভয় না পায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার ফলে যে মৃদু উপসর্গগুলো দেখা দেয়, সেগুলো হলো টিকা নেওয়ার স্থানে ব্যথা, ফোলা ও লাল হয়ে যাওয়া। অন্য কিছু প্রতিক্রিয়া হলো ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাত-পা–শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। এসব প্রতিক্রিয়া ১ থেকে ৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা উপশমে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক খাওয়ানো যেতে পারে।
বিশেষ ও রোগাক্রান্ত শিশুদের অগ্রাধিকার
ক্রনিক অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, থ্যালাসেমিয়া, জন্মগত হৃদরোগ ইত্যাদির মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতার ঝুঁকি বেশি। এসব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত টিকার আওতায় আনা উচিত।
লিখেছেনঃ অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সৌজন্যেঃ প্রথম আলো (১ আগস্ট, ২০২১)
ছবিঃ ইউনিসেফ
সোম, ৯ আগ ২০২১, রাত ১০:৩৩ সময়
Login & Write Comments