খেলা এবং ছবি আঁকার মাধ্যমে শেখাঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনগুলি

খেলা এবং ছবি আঁকার মাধ্যমে শেখাঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনগুলি

লুবনা চৌধুরী

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম ১৯৭৩-১৯৭৪ এ। ফরিদপুরের গোয়ালচামট এলাকায় আমার বিদ্যালয়ের নাম ছিল “প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (পিটিআই)।” বেশির ভাগ শিক্ষক ছিলেন প্রশিক্ষণরত। আমাদের শেখাতেন, আর সাথে সাথে নিজেরাও শিখতেন। আমাদের হাতে কলমে শিক্ষাটা বেশি ছিল। অনেকটা আর্ট কলেজের মতো। ছবি আঁকা এবং মাটির কাজের উপর গুরুত্ব ছিল বেশি। অক্ষর শেখানো হতো মাটি দিয়ে বানিয়ে তাই খেলছি না পড়ছি ঠিক বুঝতাম না। স্কুলে বিরাট একটা খেলার মাঠ ছিল। শরীর চর্চা বাধ্যতামূলক ছিল। খেলার ছলে পড়া হতো বলে ওখানেই পড়া শেষ হতো। আমাদের পারফর্মেন্সের উপর শিক্ষকদের মার্কিং করা হতো। তাই তাঁরা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে শেখাতেন। স্কুলে বড় একটা পুকুর ছিল সেখানে হাঁস থাকতো। আমাদেরকে পালা করে হাঁস ও মাছের খাবার দিতে হতো। বাগান করতে হতো। কোদালের ব্যবহার স্কুলেই শেখা, তবে ফল-ফুল হয়েছিল কিনা আজ আর মনে নেই।

আমার ক্লাসের প্রথম স্থান অধিকারী ছিল একজন কৃষকের ছেলে, দ্বিতীয় যে ছিল সে বুয়েট থেকে পাস করে আজ প্রতিষ্ঠিত। এখন আমার ফেসবুক বন্ধু। আমি ইউনিভার্সিটি শেষ করে স্বল্প সময়ের জন্য এনজিও-তে কাজ করে স্বেচ্ছায় অবসরে আছি। জীবনের চতুর্থ অধ্যায়ে এসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক কিছু মনে পড়ছে। সত্যিই অসাধারণ ছিল সেই দিনগুলি।

আমাদের শিক্ষক ছিলেন দুই ধরনের; একদল স্থায়ী আর অন্যদল প্রশিক্ষণরত। একজন শিক্ষক জনাব আবুল হক, যাকে খুব মনে পড়ে। অনেক বয়স্ক ছিলেন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে বাংলা, ধর্ম আর চারু ও কারুকলা পড়াতেন। তিনি আমাদের শ্রেণীশিক্ষক ছিলেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে উনার কাছেই আমার হাতেখড়ি। আমাদের বাড়িতে ধর্ম চর্চা একদমই ছিল না। আরও একজন শিক্ষককে খুব মনে পড়ছে। তিনি ছিলেন সাধারণ বিজ্ঞানের শিক্ষক। উনার নাম আব্দুল হালিম চৌধুরী (ফিরোজ স্যার নামে বেশি পরিচিত ছিলেন)। উনি ঐ সময় গবেষণামূলক বই লিখেছিলেন "ছোটদের বিজ্ঞান," যেটা আমরা পড়তাম। আমরা শিখেছি মশা তিন প্রজাতির। কিউলেক্স স্ত্রী মশা কামড়ালে ম্যালেরিয়া হয়। তখনও মশা বাহিত রোগের এতো দাপট ছিল না। মাছির বিভিন্ন ধরণ, জবা ফুলের বিভিন্ন অংশের নাম শিখেছি। মজার ব্যাপার ছিল হাতে কলমে শিক্ষাটা বেশি ছিল তাই প্রথমে ব্ল্যাকবোর্ড এ শিক্ষক ছবি এঁকে পড়াতেন; তারপর যেকোনো ছাত্র/ছাত্রীকে বোর্ডে গিয়ে শিক্ষক হতে হতো। অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক। তাই যে যাই আঁকত, মাথায় গেঁথে যেত। আমি ইউনিভার্সিটিতে গিয়েও ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় এঁকে এঁকে মনে রাখতাম। দুই বছরে ঐ স্কুল আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আজও স্যারদের চেহারা অস্পষ্ট মনে আছে। এখন আর রাস্তা থেকে স্কুলটা ভাল মতো দেখা যায় না। বাণিজ্যিক পরিবেশের আধিপত্যে শিক্ষার কি অবস্থা এখন সেটা জানিনা।

ছবিঃ paintingvalley.com


বৃহস্পতি, ২১ জানু ২০২১, রাত ৩:২৫ সময়

মতামত/ পরামর্শ/ প্রশ্ন


“শিশুরাই সব” এর এ পর্যায়ে আমরা আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করছি।
ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কি ধরণের বিষয় দেখতে চান তা জানান। লেখা পড়ে, ভিডিও দেখে শেয়ার বা মন্তব্য করুন। সন্তান পালন বা শিশুসংক্রান্ত বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে জানান। আমরা উত্তর দেব।
ওয়েবসাইটে শিশুদের জন্য আপনার ভাবনাগুলো লিখে পাঠান (সর্বোচ্চ ৫০০ শব্দ)। এছাড়া নিজের বা আপনার সংস্থার ভিডিও, রিপোর্ট, অনুষ্ঠানের তথ্য ইত্যাদি শেয়ার করুন। উপযুক্ত হলে আমরা প্রকাশ করব।

যোগাযোগ