বিশেষ শিশু নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা
মারজিয়া আলী কেয়া
প্রচলিতঃ বিশেষ শিশুরা কোন একটি বিষয়ে খুব ক্রিয়েটিভ বা দক্ষ হয়।
বাস্তবঃ ক্ষেত্রবিশেষে হয়, সবাই নয়।বরং অনেকেরই লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি থাকে।
প্রচলিতঃ মায়েরা চাইলেই তাদেরকে সব ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানাদীতে নিয়ে যেতে পারেন। মায়ের সদিচ্ছার অভাবেই এই সকল শিশুরা সোশ্যালিজম শিখছে না।
বাস্তবঃ বিশেষ শিশুদের অনেকের বিহেভিয়্যার ইস্যুজ থাকে, তারা মা বা কেয়ার গিভার কে বিব্রত করতে ভালবাসে, এটা তাদের জন্য একধরণের খেলা। তাদের এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা হয় বিভিন্ন সোশ্যাল ব্রিফিং এবং বিহেভিয়্যার থেরাপির মাধ্যমে। এছাড়াও একটা খুব অর্গানাইজড বিশেষ শিশুরও হঠাৎ মেল্ট ডাউন, মুড স্যুইং হতে পারে, যার কারণ আনপ্রেডিক্টেবল। ওদের বেশি শব্দ, গান-বাজনা, টাচ সেনসেশন অনেক কিছু নিয়েই ইরিটেশন হতে পারে। অনেকের আবার ইটিং ডিজওর্ডার থাকে। তাই যেসব অনুষ্ঠানাদি কিছুটা সংবেদনশীল সেখানে তাদেরকে বাসায় রেখে মায়েরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে সেই মায়ের নির্মমতা প্রকাশ পায়না, বরং তিনি নিজে সমাজচ্যুত না হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যান।
প্রচলিতঃ অটিজম ছোঁয়াচে রোগ।
বাস্তবঃ অটিজম ছোঁয়াচে নয়। এটা সম্পূর্ণই একটা নিউরোলজিক্যাল ডিজওর্ডার। কাজেই আমার সন্তানের গ্লাসে মুখ লাগিয়ে পানি পান করলে আপনার শিশুটিরও আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। যা বাস্তবে আমার সাথে হয়েছে, তখন নীরবে অশ্রু ফেলেছি। আর এখন সমাজে বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।
প্রচলিতঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের অসতর্ক এবং কেয়ারলেস জীবনযাপনের ফলেই এমন শিশুর জন্ম, কাজেই পরবর্তীতে পুনরায় সন্তান ধারন করে ফেললে এমনভাবে না চলা যেন আবার একই ধরনের সন্তান জন্মগ্রহণ করে ফেলে।
বাস্তবঃ বিশেষ শিশু জন্মের প্রকৃত কারণটি এখনও চিকিৎসা বিজ্ঞান বের করতে পারেনি। বিভিন্ন কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত গবেষণা ও পর্যালোচনা করে যাচ্ছেন। তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফল গোপন না রেখে অবশ্যই পৃথিবীবাসীর সম্মুখে উম্মোচন করা হবে। কাজেই একতরফাভাবে বিশেষ শিশুটির মা-কে প্রতিনিয়ত এই দুর্ভাগ্যের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা বন্ধ করুন। পরিশেষে বলব, প্রতিটি বিশেষ শিশুই আলাদা। কারো সাথে কারো তুলনা করে পরিবারগুলোকে আঘাত করবেন না। সবাই যার যার সাধ্যানুযায়ী তার সন্তানের পেছনে স্ট্রাগল করে যাচ্ছে, এবং এটা একটা প্রচন্ড স্ট্রেসফুল ও ব্যয়বহুল লাইফ জার্নি। কেউ যদি পারিবারিক বিভিন্ন দায়বদ্ধতায় তাদের পেছনে আশানুরূপ ব্যয় করতে না পারেন সেক্ষেত্রেও তাকে কাঠগড়ায় তোলার কোন অধিকার আপনার বা আমার নেই। আমরা প্রত্যেককে নিজের মত করে বাঁচতে দেই। আসুন সবাই সুশিক্ষত হই।
ছবিঃ Shutterstock
রবি, ২৫ জুল ২০২১, রাত ৯:৪৯ সময়
Login & Write Comments