সচেতনতা ও সঠিক তথ্য সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমাতে পারে
বাংলাদেশে প্রতিবছরে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে মারা যান ৬/৭ হাজার মানুষ।
সাপে কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ।
সাপে কামড় দিলে কি করবেন?
১। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বার বার আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে, আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না। কেননা, নির্বিষ সাপের কামড়েও আতঙ্কিত হয়ে মানসিক আঘাতে মারা যেতে পারে। (বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই বিষহীন। হাতেগোনা কিছু সাপ বিষধর। আবার, বিষধর সাপ পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এসব জানানোর মাধ্যমে রোগীকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে)।
২। আক্রান্ত অঙ্গ অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। হাতে হলে হাত নড়ানো যাবে না। পায়ে হলে হাঁটাচলা করা যাবে না, স্থির হয়ে বসতে হবে।
৩। আক্রান্ত অঙ্গ ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে প্যাঁচাতে হবে। একে প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলে। ব্যান্ডেজ না পাওয়া গেলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
৫। ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, ‘তাগা’ ইত্যাদি পড়ে থাকলে খুলে ফেলুন।
৬। রোগীকে আধাশোয়া অবস্থায় রাখুন।
৭। যদি রোগী শ্বাস না নেয় তাহলে তাকে মুখে শ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
৮। যদি সাপটি ইতোমধ্যে মেরেই ফেলেন, তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসুন। তবে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনভাবেই হাত দিয়ে ধরা যাবে না। কেননা কিছু সাপ মরার ভান করে থাকে। তবে সাপ মারতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
৯। যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
যে কাজগুলো কোনভাবেই করা যাবে না
না জেনে আমরা এমন কিছু কাজ করি, যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি।
১। কোন ধরনের শক্ত বাঁধন/গিট দেওয়া যাবে না। সাধারণত দেখা যায়, হাত বা পায়ে কামড় দিলে কামড়ানো জায়গা হতে উপরের দিকে দড়ি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। বরং এতে বন্ধনকৃত হাত/পায়ে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন (Necrosis) শুরু হতে পারে।
২। চিকিৎসার জন্য ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
৩। কামড়ানো স্থানে ব্লেড, ছুরি প্রভৃতি দিয়ে কোন প্রকার কাটাকুটি করা যাবে না।
৪। অনেক মানুষের ধারণা, আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বের করলে রোগী ভালো হয়ে যাবে। বিষ রক্ত এবং লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা কোনভাবেই চুষে বের করা সম্ভব নয়। তাই কোন অবস্থাতেই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেয়া যাবে না।
৫। কোন রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে ছ্যাঁক দেয়া যাবে না।
৬। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির কোন কিছু গিলতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়, বমি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, নাসিক কণ্ঠস্বর ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না।
৭। কোন কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না।
৮। ব্যথা নিবারণের জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
পরিশেষে, এই বর্ষার মৌসুমে সাবধান হয়ে চলাচল সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে পারে। চিকিৎসকরা এই সময় নিয়মিত বাড়িঘর এবং আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখার পাশাপাশি রাতের বেলা অন্ধকারে চলাচল না করার পরামর্শ দেন। মূলত সচেতন হওয়ার মাধ্যমেই সাপের কামড় প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সৌজন্যেঃ দুর্যোগ ফোরাম
শনি, ২৪ জুল ২০২১, সকাল ৪:২ সময়
Login & Write Comments