শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কি করবেন?
এ বছর ভাইরাসের নতুন ধরন আসায় অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি শিশুমৃত্যুর ঘটনাও কম ঘটছে না। তাই শিশুদের কিছু হবে না, কোনো ঝুঁকি নেই, এমনটা ভাবা বাতুলতা।
লক্ষণ
- আক্রান্ত শিশুদের অনেকেরই (প্রায় ৮০ শতাংশ) তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। রোগের তীব্রতাও বেশি থাকে না। তারা সাধারণত জ্বর, কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ, ক্ষুধামান্দ্য, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি নিয়েই চিকিৎসকের কাছে আসে। এ ছাড়া আক্রান্ত শিশুদের অনেকেরই ক্লান্তি, দুর্বলতা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকে। তবে আশার কথা, বেশির ভাগ আক্রান্ত শিশু এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
- কিন্তু যেসব শিশু আগে থেকেই নানা রকম অসুস্থতায় ভুগছে, যেমন মোটা বা স্থূলকায়, যাদের ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ঘাটতিসহ অন্যান্য সমস্যা যাদের আছে, তাদের করোনা হলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
- এ ছাড়া কোভিডে আক্রান্ত শিশুরা অনেক সময় এমআইএস-সি নামের মারাত্মক এক জটিলতায় পড়ে যায়, যা জীবন সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যায় কোভিডে আক্রান্ত শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হয়। জ্বর সময়ের সঙ্গে কমে না বরং তা আরও বেড়ে যায়। সঙ্গে শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ আসে, চোখ, ঠোঁট, জিহ্বা, হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে লাল হয়ে যায়, কখনো কখনো হাত বা পায়ের পাতা ফুলে যায়, পাতলা পায়খানার সঙ্গে অনেকের পেটে ব্যথা হয় এবং শিশু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, মাড়ি, নাক দিয়ে রক্তপাত হয়।
শিশুর করোনায় করণীয়
- যদি কোনো শিশু কোভিডে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসে, তাকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে তার কোভিডের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় কি না। কোনো শিশু যদি এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে যায় বা জ্বর, কাশিতে ভুগতে থাকে, তাহলে তাকে নজরদারির পাশাপাশি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
- খাবার আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টিকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং মুখরোচক করার চেষ্টা করুন।
- পানি বা তরল খাবার, আগের চেয়ে একটু বেশি দিন। পানিশূন্যতা হচ্ছে কি না, তা বুঝতে শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে।
- ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফলমূল বা কমলালেবু, কাঁচা আমের রস ইত্যাদি দিন।
- জ্বরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে প্যারাসিটামল দিতে হবে। কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা অন্য কোনো এনএসএআইডি (ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস) জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না।
- পালস অক্সিমিটার দিয়ে শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫-এর ওপরে আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।
- জ্বর বেশি হলে কুসুম গরম পানিতে মাথাসহ পুরো শরীর মুছিয়ে দিতে হবে।
- শিশুকে কুসুম গরম পানিতে নিয়মিত গোসল করিয়ে দিতে হবে।
- জ্বর পরপর তিন দিন অব্যাহত থাকলে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় রক্ত, বুকের এক্স-রে এবং কোভিডের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে এবং রোগের মাত্রানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
- প্রতিনিয়তই খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর শরীরে কোনো র্যাশ উঠছে কি না, চোখ, ঠোঁট, জিহ্বা অস্বাভাবিক লাল হচ্ছে কি না, প্রস্রাব ঠিক আছে কিনা বা পেটে ব্যথা হচ্ছে কি না। শিশুর পালস রেট বা বুক ধড়ফড়ানি লক্ষ করুন, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না বা মাড়ি, নাক দিয়ে রক্ত আসছে কি না দেখুন। এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই জরুরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।
লিখেছেন অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা
শিশু বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
সৌজন্যেঃ প্রথম আলো
ছবিঃ ইউনিসেফ
সোম, ৯ আগ ২০২১, রাত ১০:২ সময়
Login & Write Comments